বাংলাদেশের কাস্টমার ছাড়া চলে না কলকাতার নিউ মার্কেট
ভারতের কলকাতা পৌর সংস্থার বিখ্যাত এক মার্কেটের নাম ‘নিউ মার্কেট’। এটিই কলকাতার প্রথম মিউনিসিপ্যাল মার্কেট। পৌর সংস্থার কার্যালয় থেকে মিনিট দশেক হাঁটলেই এ মার্কেটের দেখা মিলবে। এ মার্কেটের বড় অঙ্কের ব্যবসা হয় বাংলাদেশি ক্রেতাদের মাধ্যমে।
জানা গেছে, ১৮৭৪ সালের জানুয়ারি মাসে ইংরেজদের জন্য মার্কেটটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কলকাতা করপোরেশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান স্যার স্টুয়ার্ট হগ এ মার্কেট নির্মাণে দৃঢ় সমর্থন জানান। তারপর ১৯০৩ সালে স্টুয়ার্ট হগের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় এস এস হগ মার্কেট। বর্তমানে মার্কেটটি সম্প্রসারণ করা হয়েছে, তাই এটি হগ মার্কেট থেকে নিউ মার্কেট নামে বেশি পরিচিতি লাভ করেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এ মার্কেটে দুই হাজারেরও বেশি দোকান রয়েছে। জুতা, জামা, শাড়ি, খেলনা, খাবার, ঘর সাজানোর জিনিসপত্র, মসলা, গয়না সব কিছুই পাওয়া যায় এখানে। কেনাকাটা শেষে খাওয়া-দাওয়ারও সুব্যবস্থা রয়েছে বাজারের বাইরে। চাইলে মুখরোচক পানি ফুচকা খেতে পারবেন ২০ টাকার বিনিময়ে। ৫০ টাকার বিনিময়ে নানারকম ফলের মিশ্রণে এক প্লেট ফলও খেতে পারবেন। এছাড়া নানারকম খাবারের পসরা নিয়ে বসে থাকেন দোকানিরা।
বর্তমানে নিউ মার্কেট বড় হয়েছে। বাজারের অভ্যন্তরের দোকানিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফুটপাতেও নানারকম জিনিসপত্র বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাজার খোলা থাকে। তবে ফুটপাত চলে মধ্যরাত পর্যন্ত।
শুক্রবার বার (১৪অক্টোবর) বিকেল থেকে শুরু করে শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) রাত পর্যন্ত মাঝে মধ্যে বাজারে ঘুরতে গিয়ে দেখা মেলে অসংখ্য বাংলাদেশির। কেউ এসেছেন ঘুরতে, কেউবা চিকিৎসা সেবা নিতে। সারাদিনের কাজ শেষে তারা ছুটে আসেন শপিং করতে। প্রতিদিনই কথা হয় দু-একজনের সঙ্গে।
বাংলাদেশের পুরান ঢাকার বাসিন্দা সুবাহান আলী। কয়েকদিন হলো কলকাতায় এসেছেন। তিনি জানান, চিকিৎসাজনিত কারণে সপরিবারে তারা কলকাতা এসেছেন। সময় আছে তাই ঘুরতে এসেছেন বিখ্যাত এ মার্কেটে। কেনাকাটা তেমন একটা করা হয়নি। তবে জিনিসপত্র মোটামুটি সুলভ মূল্যেই পাওয়া যাচ্ছে। মনেই হচ্ছে না তিনি ঢাকার নিউ মার্কেট ছেড়ে কলকাতার নিউ মার্কেটে আছেন।তার মতো আরও অনেকেই জানান, এ মার্কেটে সন্ধ্যার পর থেকে বাংলাদেশি ক্রেতাদের সংখ্যা বেড়ে যায়। মার্কেটে অনেকে ঘুরতে এসে পছন্দের জিনিসটি কিনে নেন। এখানে মোটামুটি সবধরনের জিনিসপত্র পাওয়া যায় বলে কলকাতায় বাংলাদেশিদের পছন্দের তালিকায় এ মার্কেটটি সবার ওপরে।
নিউ মার্কেট সংলগ্ন লিন্ডসে ফুটপাতের কাপড় ব্যবসায়ী মো. সাজেদ বলেন, নিউ মার্কেট চলেই বাংলাদেশি কাস্টমার দিয়ে। সারাবছর আমরা প্রচুর কাপড় বিক্রি করি বাংলাদেশিদের কাছে। কলকাতার কাস্টমাররা পূজা এবং ঈদে কেনাকাটা করলেও বাংলাদেশিরা সারাবছরই এখান থেকে কেনাকাটা করেন। তবে করোনাকালে বেশ মন্দা গেলেও এখন মোটামুটি ব্যবসা বেড়েছে।
নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. রিয়াজ জানান, মূলত তাদের ব্যবসা ফুটপাতকে কেন্দ্র করে। মাঝে করোনাকালে তাদের ব্যবসা খুবই মন্দা ছিল। ওই সময় বাংলাদেশ থেকে কোনো লোকজনই আসতে পারেননি। তবে করোনার পর থেকে তাদের এ ব্যবসা আবারও জমে উঠেছে। প্রতিদিন তার ১০-১৫ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। কেউবা আবার ২০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন বলেও জানান তিনি।এছাড়া কথা হয় এ মার্কেটের পুরানো ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রাজু আলম, নওশাদসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা বলেন, লিন্ডস রোড ও রাফি আহমেদ কিড বাই রোডে প্রচুর ব্যবসায়ী আছেন। তাদের বড় একটি ব্যবসা হয় বাংলাদেশি ক্রেতাদের মাধ্যমে। যখন বাংলাদেশিরা কম আসেন তখন তাদের ব্যবসায় ভাটা পড়ে। যার প্রমাণ মিলেছে করোনার সময়।
Leave a Reply