দেশমাতৃকাকে ভালবেসে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মাগুরার শ্রীপুরের নোহাটা গ্রামের মোঃ নুরুল ইসলাম । রনাঙ্গণে জীবনবাজি রেখে ৮নং সেক্টর যশোহর শ্রীপুর মাগুরার শ্রীপুর বাহিনীর অধিনায়ক আকবর হোসেন মিয়া’র নেতৃত্বে মহান মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাঁধে কাঁধ রেখে যুদ্ধ করে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছিলেন তিনিসহ বীর সেনানীরা। কিন্তু সেই নুরুল ইসলামের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকাতেই নেই। অসুস্থ জনিত কারণে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কালীন সময়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকায় অনলাইন আবেদন করতে পারেন না নুরুল ইসলাম, যার কারনে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ পড়েন তিনি। যা তার সহযোগী মুক্তিযোদ্ধাদের বিস্মিত করেছে। ১২ই নভেম্বর দুপুর ২টা ৩০মিনিটে নিজ বাড়িতে শ্রীপুর উপজেলার নোহাটা গ্রামে বার্ধক্য জনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮বছর। নুরুল ইসলামের স্ত্রী সফুরা বেগম বলেন, তার স্বামী মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করছিলেন, অথচ সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না হওয়ার কারণে সে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। তার স্বামী মুক্তিযুদ্ধের পর দুইবার স্ট্রোক করেন, গত প্রায় ৩বছর যাবৎ তিনি স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন না এবং অসুস্থতার কারণে প্রায় দুই বছর মুখ দিয়ে কথা বলতে পারেন না। আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ার ফলে তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে পারি নাই। তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এ বিষয়ে শ্রীপুর বাহিনীর অধিনায়ক আলহাজ্ব আকবর হোসেন মিয়া, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মাগুরা জেলা ইউনিটের কমান্ডার মোল্লা নবুয়ত আলী, শ্রীপুর উপজেলা কমান্ডার মোঃ ইকরাম আলী, শ্রীপুর উপজেলার ৭নং সব্দালপুর ইউনিয়ন কমান্ডার মোঃ শেখ কওছার আলী, শ্রীপুর বাহিনীর যুদ্ধকালীন কমান্ডার সৈয়দ মারুফ আহম্মদ (মাক্ষু ভাঈ) সহ সহযোদ্ধা অনেকই মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যয়ণ পত্রও প্রদান করে। এছাড়াও আমার স্বামী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এ বিষয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী ও মহান মুক্তিযুদ্ধে ৮নং সাব-সেক্টর কমান্ডার, মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) এটিএম আব্দুল ওয়াহ্হাব স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র প্রদান করেন । সফুরা বেগম বলেন, তার স্বামী নুরুল ইসলাম প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণিত হওয়ার জন্য বর্তমান মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ফ ম আব্দুল ফাওাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম খয়ের উকিল, মুক্তিযোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম পরিমল বালাসহ সহযোগী অনেকেই তার জন্য সুপারিশও করেছিলেন। কিন্তু তারপরও মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হতে পারেন নাই তিনি। এ বিষয়ে বর্তমান মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ফ ম আব্দুল ফাত্তাহ জানান, নুরুল ইসলাম আমার যুদ্ধকালীন সময়ের বন্ধু তাকে আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবেই জানি। কিন্তু সে তালিকাভুক্ত হতে পারে নাই এই কথা ভাবতেও আমার কষ্ট হয়। নুরুল ইসলামের একমাত্র পুত্র দৈনিক দেশের কন্ঠ পত্রিকার শ্রীপুর উপজেলা প্রতিনিধি ও মাগুরা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র (এমআরইউ) শ্রীপুর উপজেলা শাখার প্রচার সম্পাদক সাংবাদিক মোঃ মিরাজ শেখ বলেন, আমার পিতা একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কিন্তু দুঃখের বিষয় আমার পিতা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্বেও তিনি তালিকাভুক্ত হতে পারেন নাই। আমি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি হওয়ায় পিতার চিকিৎসা ও সন্তানদের পড়াশোনার খরচসহ পরিবারের সকল খরচ আমাকে বহন করতে হয়। আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় পিতার উন্নত চিকিৎসা দিতে পারি নাই। সাংবাদিক পিতার মৃত্যুতে মাগুরা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র (এমআরইউ) কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি এইচ এন কামরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইউনুস আলী এক বিবৃতিতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এমআরইউ নেতৃবৃন্দ মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। জানা যায়, মোঃ নুরুল ইসলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাব পেতে চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। শনিবার (১২-নভেম্বর) মাগরিব বাদ তার নিজ গ্রাম নোহাটা উওর পাড়া জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা সম্পন্ন হয়।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ ইউনুস আলী
ঠিকানা : আব্দুল মজিদ মার্কেট,
দ্বিতীয় তলা ভায়না মোড়, মাগুরা।